সকালে
আমি উঠে দেখি ৯ঃ০০ টা বেজে গেছে।আমি তারাতারি করে ফ্রেশ হয়ে নিলাম।তারপর এসে রেডি হয়ে নিলাম।
আজ আমাদের ভার্সিটিতে প্রোগ্রাম আছে আর তাই আমি আজকে শাড়ী পরে যাব।
কিন্তু কাহিনী হচ্ছে আমি শাড়ী পরতে পারি না।
আমিঃকি করব এখন??পাইছি চাচিরে বলি চাচি পরাইয়া দিতে পারবে।
যেই ভাবা সেই কাজ আমি চাচি কে আমার রুমে আসতে বললাম।
চাঁকঁায়াকচি আমার রুমে এসে দেখে আমি শাড়ী হাতে নিয়া বসে আছি।
আমার এই অবস্থা দেখে চাচি হেসে দিল।আমিঃহাসো হাসো আরও ভালো করে হাসো
চাচিঃকই হাসলাম?
আমিঃনাও তারাতারি করো।
চাচিঃআইচ্ছা দাও আমি পরাইয়া দেই।
চাচি আমাকে খুব সুন্দর করে কুচি দিয়ে শাড়ী পরিয়ে দিল
তারপর আমি মাঝখান দিয়ে সিতা করে একটা খোপা করলাম।তারপর হালকা সাজ দিলাম আর খোপায় কাজরা পরলাম।একদম বাঙালি সাজ সেজেছি।
আজকে আমি লাল কালারের সুতির শাড়ী পরেছি।চুল গুলা মাঝখান দিয়ে সিতা করে খোপা করে তার মধ্যে সাদা বেলি ফুলের কাজরা দিলাম।কানে বড় সিলভার কালারের দুল পরলাম।গলায় কিছু দিলাম না।চোখে কাজল আর ঠোঁটে হালকা লাল লিপস্টিক।আর দুই হাত ভর্তি লাল চুরি পরলাম।কালো কালারের ব্লাউজের সাথে লাল কালারের শাড়ীটা সেই লাগছে।
আমাকে দেখে চাচি আমার কানের নিচে কালো টিকা লাগিয়ে দিল আর বলল
চাচিঃযা লাগছে না তোমাকে। অনেক সুন্দর লাগতাছে।তা আজকে তোমাগো কলেজে আইজ্জা কিতা??
আমি হাসতে লাগলাম।
আমিঃচাচি কলেজ না ভার্সিটি।
চাচিঃওই একই।তা কি আছে??
আমিঃআজকে একটা বড় অনুষ্ঠান আছে।আর সে অনুষ্ঠানে উপস্থাপন করছি আমি, বিশাল আর ভাবিন।বুঝলা??
চাচিঃও আইচ্ছা এলাইগাই
তোমরা তিনজনে লাল কালার পরছো?
আমিঃহুম চাচি।
তারপর আমি নিচে নামলাম।
নেমে দেখি আমার ভাইয়ারা আর বিশালরা আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
আমিও সবার দিকে একবার চোখ ভুলিয়ে নিলাম।আজ সবাইকে খুব সুন্দর লাগতাছে।
আজ বিশাল আর ভাবিন লাল কালারের পাঞ্জাবী পরেছে আর সাদা কালারের চুরিদার পরেছে।চুল গুলা ওপরের দিকে স্পাইক করা,হাতে ঘড়ি।
দুইজনে আজকে সেইম সাজ সেজেছে।
আর আমার দুইভাই আজকে সাদা আর কালো কালারের পাঞ্জাবী পরেছে। দুইভাই একই কালালের পাঞ্জাবী পরেছে। হাতে কালো কালারের ঘড়ি আর চুলগুলা একসাইডে স্পাইক করা।
ব্যস এতেই আমার দুই ভাইকে পুরাই হিরো লাগতাছে।
আমি খেয়াল করলাম এখনও সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
আমিঃকি হল এভাবে অবাক হয়ে সবাই তাকিয়ে আছ কেন??
আমার দুইভাই কোন কথা না বলে আমার দিকে এগিয়ে আসলো। তারপর দুইজনেই একসাথে আমার কপালে চুমু দিল।
বড়ভাইয়াঃআমার মিস্টি বোনটার যাতে কারোর নজর না লাগে।
ছোটভাইয়াঃহুম এই পেত্নীর ওপর আর কার নজর লাগবে?
আমিঃতাই বুঝি।।
এই বলেই আমি ছোটভাইয়ার চুল টেনে ধরলাম আর পিঠে ধুরুম ধুরুম কিল মারলাম।
আমিঃদেখ কেমন লাগে।
ছোট ভাইয়াঃ তোর এই কিল আমার জীম করা বডিতে কিছুই না।
আমি আর কিছু না বলে মুখ ফুলিয়ে বসে পরলাম।
আমার এই অবস্থা দেখে সবাই হাসতে লাগলো।
বড়ভাইয়াঃঅনেক হইছে এবার তোরা তিনজন আল্লাহর নাম করে বের হো।
বিশালঃহুম।কিন্তু তোমরা যাবে না?
বড়ভাইয়াঃআমরা আরও পরে যাব।
আমিঃআচ্ছা।
ভাবিনঃতাহলে আমরা আসি।
এই বলে আমরা তিনজন গাড়ি নিয়ে বের হয়ে পরলাম।
গাড়ি নিয়ে বের হতেই আমি খেয়াল করলাম আমাদের পিছনে আরেকটা গাড়ি আসছে।আমি প্রথমে পাত্তা না দিলেও পরে দেখি যে গাড়িটা আমাদের পিছনেই লেগেই আছে।
আমিঃবিশাল,ভাবিন আমাদের পিছনে পিছনে একটা গাড়ি আসছে।আমার মনে হয় কেউ আমাদের ফলো করছে।
বিশালঃকি বলিস!!
ভাবিনঃ আমিও খেয়াল করেছি।
আমিঃএক কাজ করি ভাইয়াদের বলি।
বিশালঃহুম।
তারপর আমি বড় ভাইয়াকে কল দিলাম।
আমিঃবড় ভাইয়া আমাদেরকে কেউ মনে হয় ফলো করছে।
বড়ভাইয়াঃকি বলছিস এসব!!
আমিঃহুম ভাইয়া।
বড়ভাইয়াঃতুই শিওর???
আমিঃ১০০%।
বড়ভাইয়াঃআচ্ছা আমি দেখছি।
এই বলেই ভাইয়া কল কেটে দিল।
বিশালঃভাইয়া কি বলল?
আমিঃবলল দেখছে।
ভাবিনঃআচ্ছা কারা আমাদের ফলো করতে পারে।আমাদের ওপর নজর রাখতে পারে।
আমি আর বিশাল একমনে ভেবে যাচ্ছি।
আমিঃআমি যা ভাবছি তোরা কি তাই ভাবছিস??
বিশালঃমনে হয়।
ভাবিনঃযদি তাই হয় তাহলে আজকে অনেক কিছু ঘটবে।
Aআমিঃহুম।আমাদের আজকে সবদিকে নজর রাখতে হবে আর বিশাল এক কাজ কর জনি ভাইয়াকে কল করে সব বলে দে।
বিশালঃআমি বলছি।
বিশাল জনি ভাইয়াকে কল করে আওব বলল।তারপর কেটে দিল।
আমিঃকি বলেছে ভাইয়া?
বিশালঃবড়ভাইয়া,ছোটভাইয়া আর জনি ভাইয়া মিলে আলোচনা করছে কি করা যায়। আর বলেছে আমরা যাতে নরমাল ভাবে থাকি।যাতে আমরা কিছুই বুঝি নাই বা জানি না।
আমিঃবুঝলাম।
অন্যদিকে
অজানাঃতাদের ওপর নজর রাখছো তো ভালভাবে??
লোকঃহুম স্যার।
অজানাঃকোন সন্দেহজনক কিছু দেখলে??
লোকঃ না স্যার।ওদের সবকিছুই নরমাল আছে।
অজানাঃকি বল?
লোকঃহুম স্যার।আমার মনে হয় ওরা এসবের সাথে যুক্ত না।
অজানাঃআরও ভালো করে নজর রাখ।
আমি দেখছি কি করা যায়।
এই বলেই অজানা কল কেটে দিল।তারপর নিজে নিজেই বলতে লাগলো
অজানাঃওরা যদি না হয় তাহলে কে এসব করছে।যে এসব করুক না কেন আমি তাকে ধরবই।(রেগে টেবিলে লাথি দিয়ে)
In varsity.....
আমরা ভার্সিটিতে ডুকলাম।ডুকে দেখি ভার্সিটি অনেক সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। আমরা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি।
আমরা তিনজন একবার আড়চোখে আমাদের লোকগুলাকে দেখে নিলাম।হুম সব ঠিক আছে।
আমিঃদেখ কতো সুন্দর করে সাজিয়েছে।
বিশালঃহুম।অনেক সুন্দর করে সাজিয়েছে।
ভাবিনঃআচ্ছা চল আমরা যাই।
আমিঃহুম।চল যাই।
আমরা তিনজনই স্টেজের কাছে গেলাম।
তখনি একটা স্যার এএসে বলল
স্যারঃতোমরা চলে এসেছো। আচ্ছা তোমরা রেডি হয়ে নাও একটু পরই অনুষ্ঠান শুরু হবে।
আমিঃওকে।
এই বলে স্যার চলে গেলো। আমরা তিনজন অনুষ্ঠান শুরু করার প্রস্তুতি নিচ্ছি।
ঠিক তখনি একটা পিচ্ছি ছেলে এসে আমাকে বলল আমাকে নাকি পুকুরপাড়ে ডাকছে।
আমি অবাক হলাম।কিন্তু আমি কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই পিচ্ছি ছেলে এক দৌড় দিল।
আমিঃএই পিচ্ছি দাঁড়াও বলছি।যা চলে গেলো।
বিশালঃতোকে আবার কে ডাকছে।
আমিঃবাদ দে তো।এখনি অনুষ্ঠান শুরু হবে।
ভাবিনঃহুম।
স্যারঃএই শুনো প্রধান অতিথি আর বিশেষ অতিথিরা এখনি চলে আসবে।
কে কে বরন করবে?
আমিঃস্যার প্রধান অতিথিকে রুশা আর মেহেক বরন করবে আর বিশেষ অতিথিকে সারা করবে।
স্যারঃঠিকাছে তাহলে তুমি ওদের কে এখনি গেইটের কাছে যেতে বল
আমিঃজ্বি।
এই বলে স্যার চলে গেলো। স্যার চলে যেতেই রুশা আর মেহেক আমাদের কাছে আসলো।
আমি ওদের দিকে হা করে তাকিয়ে আছি।
কারন ওদেরকে আজকে খুবই সুন্দর লাগছে।
রুশা আজকে কলা পাতা রঙের শাড়ী পরেছে।হাতে সবুজ রঙের চুরি।চুলগুলা ছেড়ে দিয়েছে আর কানে বড় ঝুমকো পরেছে।আর একটু ভারি মেকআপ করেছে।
আর মেহেক আজকে নীল কালারের শাড়ী পরেছে আর চুলগুলা একসাইডে খোপা করেছে।কানে মাঝারি সাইজের ঝুমকো আর হাতে নীল কালারের চুরি। মুখে একটু ভারি মেকআপ।
ব্যস এই সাজেই যেন দুইজনকে পরী লাগছে।
আমিঃবাহ তোদেরকে তো খুব সুন্দর লাগছে।
রুশাঃআমাদের ছাড় তোকে তো আজকে একদম পরী লাগছে।
মেহেকঃএকদম।
আমিঃহয়েছে হয়েছে এবার চল।সবাই চলে আসবে এখনি।
সারাঃআপু আমিও চলে এসেছি।
আমি পিছনে তাকিয়ে দেখি সারা চলে এসেছে।
সারাও আজকে কলা পাতা রঙের শাড়ী পরেছে ল,চুলগুলা খোপা করেছে আর হালকা সেজেছে।
আমিঃবাহ সারা তোমাকে তো খুবই সুন্দর লাগছে।
রুশাঃহুম।
মেহেকঃএকদম
আমিঃসারাকে দেখে তো আমাদের ভাবিনের চোখের পলকই পরছে না।
বিশালঃহুম।সেই কখন থেকে হা করে আছে।
এই বলে আমরা সবাই হাসতে লাগলাম।আর ভাবিন আর সারা লজ্জায় লাল হয়ে গেলো।
আমিঃআচ্ছা তোরা যা।আমি একটু ওয়াশরুম থেকে শাড়ী ঠিক করে আসছি।
রুশাঃআচ্ছা যা।
এই বলে তারা তিনজন গেইটের কাছে চলে গেলো আর আমি ওয়াশরুমে যেতে লাগলাম।
হঠাৎ কেউ আমার হাত টেনে একটা ফাকা রুমে নিয়ে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলো।
আমিঃকে আপনি আর আমাকে এভাবে এখানে আনার মানে কি?(রেগে)
Jimin: আমি ছাড়া তোমাকে আর কে এখানে আনবে ময়নাপাখি!
আমিঃতুমি!!!!!(অবাক হয়ে)
Jimin: আর কে হবে?ওয়েট তুমি কি অন্য কাউকে আশা করেছিলে?
আমিঃহুম।তোমার দাদুকে(মুখ ভেঙচিয়ে)
Jimin হাসলো। তারপর বলল।
Jimin: শুন আমার দাদু এখনও আমার দাদিকে খুব ভালবাসে। কারন আমার দাদি খুবই সুন্দরী ছিল তোমার মতো পেত্নী ছিল না।
আমিঃওহ তাই তাহলে আমার পিছনে এমন ঘুর ঘুর করছো কেন যাও না কোন সুন্দরী মেয়ের পিছনে ঘুর ঘুর কর।
Jimin: উম্ম না আমার যে এই পেত্নীকেই পছন্দ হয়েছে।
আমিঃদেখ সরো।আমার কাজ আছে যেতে হবে।
Jimin: দেখি আমার ময়না পাখিটা আজকে কেমন করে সেজেছে।
এই বলে আমার দিকে কতক্ষন একধ্যানে তাকিয়ে আছে।
আমিও দেখলাম আমার রাজা মশাইকে।
Jimin আজকে একটা কালো কালারের পাঞ্জাবী পরেছে আর সাদা কালারের চুরিদার। চুলগুলা স্পাইক করা। হাতে কালো কালারের ঘড়ি।
একদম আমার রাজার মতো লাগছে।
আমিঃদেখা শেষ আমাকে?
Jimin: হুম।আজকে না তোমাকে একদম লাল পরী লাগছে।(কানের কাছে ফিসফিস করে নেশাক্ত কন্ঠে)
আমিঃআ আম আমি আসছি।
এই বলেই আমি চলে আসতে নিলে Jimin আমার হাত ধরে টান মেরে আমাকে ঘুরিয়ে আমার পিছন থেকে আমাকে জড়িয়ে ধরল তারপর আমার কানে কানে ফিসফিস করে বলল
Jimin: এতো তাড়া কিসের পাখি?
বলেই আমার কানে একটা কামড় দিল।
এবার আমি Jimin কে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে চলে আসলাম।
অন্যদিকে
আমার ভাইয়াদের বরন করার জন্য রুশা আর মেহেক ফুলের তোরা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।আমার দুইভাই দুইটা গাড়ি থেকে নেমে আসলো।আমার ভাইয়াদেরকে দেখে সব মেয়েরা হা হয়ে আছে। আমার দুইভাই নেমে রুশা আর মেহেকের সামনে দাড়ালো।
আমার দুইভাইকে দেখে রুশা আর মেহেকও হা করে তাকিয়ে আছে।
আর রুশা আর মেহেককে দেখেও ভাইয়ারা হা হয়ে আছে।
বড়ভাইয়া মেহেকের কানে সবার আড়ালে ফিসফিস করে বলল
বড়ভাইয়াঃআজকে তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে।
মেহেক কিছু না বলে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। কিন্তু কিছু বলল না।
তারপর রুশা আর মেহেক মিলে ভাইয়াদের বরন করে নিল।
ভাইয়াদের বরন করতে করতেই বিশেষ অতিথি এলো।
বিশেষ অতিথি গাড়ি থেকে নেমে আসলো।
আর বিশেষ অতিথিকে দেখে আমার ভাইয়ারা অবাক হয়ে গেলোও তা বাইরে প্রকাশ করলো না।
তারপর আমার ভাইয়ারা আর বিশেষ অতিথিকে তাদের জন্য তৈরি আসনে নিয়ে গিয়ে বসানো হলো।
আমি স্টেজেই ছিলাম আর সামনে বসে থাকা বিশেষ অতিথিকে দেখে আমার চোখ মুখ রাগে লাল হয়ে আসলো।আমি নিজেকে শান্ত করে উপস্থাপন করতে লাগলাম।আমার ভাইয়ারা ইশারায় আমাকে শান্ত হতে বলল।
আমাদের এই ব্যাপারটা কেউ খেয়াল না করলেও Jimin খেয়াল করল