বড়ভাইয়া আর ছোটভাইয়া কনফারেন্স শেষ করে আমার রুমে আসলো। বিশাল আর ভাবিন আমাকে সুপ খাওয়ানোর চেষ্টা করছিলো।কিন্তু আমি তো আমিই ।কোনমতেই আমি এই সুপ খাব না।
বিশালঃএকটু খেয়ে নে জানু...
ভাবিনঃপ্লিজ খা।
আমিঃকোন মতেই না।আমি এসব কুখাবার খেতে পারবো না।
বড়ভাইয়াঃতুই খাবি না তোর গাড় খাবে।(রেগে)
আমিঃআমি খাব নায়ায়ায়ায়ায়ায়া(চিল্লিয়ে)
ছোটভাইয়াঃকোন লাভ নাই চিল্লিয়ে তোকে খেতেই হবে।
বিশালঃ নে এবার মজা বুঝ।
ভাবিনঃআমরা এতক্ষন ভালো করে বলছিলাম খেলি না।এবার খা।
আমিঃভাইয়া তোমরা না খুব ভালো প্লিজ আমি খাব না।(অসহায় ফেস করে)
বড়ভাইয়াঃটুকু তোর কি খুব ভালো লাগে আমাদের কস্ট দিতে?
ছোটভাইয়াঃপ্লিজ খেয়ে নে..
আমিঃখেতে পারি এক শর্তে।
বড়ভাইয়াঃকি শর্ত?
আমিঃফ্রিজ থেকে আমাকে সবগুলা চকলেট খেতে দিতে হবে..।
ভাইয়ারাঃকখনও না।
আমিঃতাহলে আমি কিছুই খাব না।ঔষধও না।
বড়ভাইয়াঃতোর মতো জেদি মেয়ে আমি আরেকটা দেখি নাই।(রেগে)
বিশালঃতোমাদেরই তো বোন।(বিরবির করে)
আমিঃডান?
বড়ভাইয়াঃডান।কিন্তু তুই ২টার বেশি চকলেট খেতে পারবে না।
আমিঃওকে।
ছোটভাইয়াঃনে এবার হা কর।
আমি চোখ মুখ খিচে সুপ খেয়ে নিলাম।তারপর ঔষধগুলাও খেয়ে নিলাম।
আমিঃএবার আমার চকলেট??
আমার চকলেট এর কথা শুনে সবাই একটা শয়তানি হাসি দিল।
আমি ভ্রু কুচকে জিজ্ঞাসা করলাম
আমিঃতোমরা কি আমাকে চকলেট গুলা দিবে না।
বড়ভাইয়াঃএকদমি না।
আমিঃঠিক তো
ছোটভাইয়াঃএকদম।
এবার আমি শয়তানি হাসি দিয়ে বললাম
আমিঃতোমরা কেন বার বার ভুলে যাও যে আমি তোমাদের বোন।
বিশালঃ মানে।
আমিঃআমি তো জানতাম তোমরা যেই বজ্জাত তোমরা আমাকে চকলেট খেতে দিবে না।তাই আমি রহিম চাচাকে দিয়ে চকলেট গুলা ফ্রিজ থেকে আনিয়ে রেখেছি।
সবাই আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
বড়ভাইয়াঃতুই না সত্যিই জেদি.....
আমিঃ
বড়ভাইয়াঃআচ্ছা অনেক মজা হইছে এখন শুয়ে পর।(মুচকি হেসে)
আমিঃওকে ভাইয়া।
সবাই চলে গেলো। আমি বারান্দায় গিয়ে চকলেট খেতে লাগলাম।
হঠাৎ কে যেন এসে আমার গায়ে চাদর দিয়ে দিল।আমি চমকে উঠলাম।
আমিঃকে?
পিছনে ফিরে দেখি Jimin।আমি চরম অবাক হলাম।আমাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে Jimin মুচকি হেসে বলল
Jimin: তুমি তো জানই যে আমি মানুষ নই।
আমিঃসেসব কথা পরে আগে বলুন আপনি এখানে এলেন কেন?(রেগে)
Jimin: আমার কথা টা তো শুনবা?
আমিঃকি শুনবো হা।আমার লাইফটা হেল করে দিয়েছেন আপনি।আমি আপনার জন্য একটুও শান্তিতে থাকতে পারি না।আমার বেস্ট ফ্রেন্ডদের জড়িয়ে ধরেছি বলে আপনি কালকে রাতে আমার এই অবস্থা করেছেন।আপনার যখন ইচ্ছা আপনি আমাকে কস্ট দেন।(চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে আমি কথা গুলা বললাম।)
Jimin কিছু না বলে আমার দিকে ছলছল দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো।
আমি থেমে আবার বলতে লাগলাম।
আমিঃপ্লিজ আপনি এখান থেকে যান।আমি আপনাকে সহ্য করতে পারছি না।I hate u....((রেগে)
Jimin: ঠিকাছে আমি আর তোমার সামনে আসবো না।
এই বলেই Jimin চোখের পলকে চলে গেল।
Jimin যাওয়ার পরে আমার কেমন জানি কস্ট লাগতে লাগলো। মনে হচ্ছে আমার কাছ থেকে আমার মহামুল্যবান কোন কিছু হারিয়ে গেলো।
আমি আর পাত্তা দিলাম না।
অন্যদিকে
বড়ভাইয়া সবাইকে তার রুমে ডেকেছে শুধু আমি ছাড়া।রহিম চাচা আর চাচিকেও ডেকেছে।
বিশালঃভাইয়া আমাদের ডেকেছো?
ভাবিনঃকি হয়েছে ভাইয়া?
ছোটভাইয়াঃ রহিম চাচা আর চাচি কই?
রহিম চাচাঃএই তো বাজান আমরা আইসা পরছি।
বড়ভাইয়াঃআমি টুকুকে কালকে সব পরিক্ষা করাই।আর তার রিপোর্ট আমি আজকে কনফারেন্সে দেখাই।
ছোটভাইয়াঃহুম আর ডাক্তাররা যা বলল তাতে আমরা দুইজনেই অবাকের শেষ পর্যায় পৌছে যাই।
বিশালঃকি এমন বলল ডাক্তাররা?
ভাবিনঃকি বলল?
বড়ভাইয়াঃডাক্তাররা বলেছে টুকু নাকি কিছুদিন আগে ও নাকি বৃষ্টিতে ভিজেছিল যার কারনে ওর ব্রেনে আবার পানি ডুকেছিল।
সবাই অবাক হয়ে গেলো। রহিম চাচা আর চাচি ভয়ে তাকিয়ে আছে।
বড়ভাইয়াঃকি হলো কথা বলছো না কেন রহিম চাচা?(চিল্লিয়ে রেগে)
ছোটভাইয়াঃভাইয়া শান্ত হয়।রহিম চাচা তারাতারি বল কি হয়েছিল।
তারপর রহিম চাচা ভাইয়াদের সব বলল।
অন্যদিকে
in park vila
Jimin নিজের রুমে আমার একটা ছবির সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
Jimin: তুমি নিজেই আমাকে তোমার কাছে ডাকবে।তুমি যতই বল যে তুমি আমাকে ঘৃণা কর কিন্তু আমি তোমার চোখে আমার জন্য ভালবাসা দেখেছি।আমি জানি তুমি আমাকে নয় তুমি তোমার লোকটাকে ভয় পেতে।যাই হোক তুমি না চাওয়া পর্যন্ত আমি তোমার সামনে যাবো না।আমি জানি তুমি নিজেই আমাকে মিস করবে।
ভাইয়ারা সব কিছু শুনে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।রহিম চাচা আর চাচি সব বলল।আমার দুইভাইয়ার চোখ মুখ লাল হয়ে গেলো রাগে।
বড়ভাইয়াঃএতোকিছু হয়ে গেলো আর আপনি আমাদের কিচ্ছু জানালেন না কেন চাচা??(রাগে চিল্লিয়ে)
ছোটভাইয়াঃআমরা আপনাকে বলছিলাম যে সব খবর আমাদের দিবেন?আপনি জানেন না যে আমাদের বোনকে আমরা কতটা ভালবাসি।ও আমাদের জান।(চিল্লিয়ে)
বিশালঃভাইয়ারা শান্ত হয়।উনি ভুল করে ফেলেছে।
রহিম চাচাঃআব্বা আমি চাইছিলাম আপনাগো কইতাম কিন্তু আম্মা মানা করছিলো।
ভাবিনঃও মানা করলো আর তোমরা শুনলে!!!
বিশালঃআচ্ছা তোমরা এখন যাও।
রহিম চাচা আর চাচি চলে গেলো।
আমার দুইভাই কান্না করতে লাগলো।
বড়ভাইয়াঃআমার জন্য আজকে এমন হয়েছে।আমার উচিৎ ছিল টুকুর সাথে এখানে চলে আসার।(কান্না করে)
ছোটভাইয়া কিছু না বলে কান্নাই করে যাচ্ছে।
ভাবিনঃডাক্তাররা কি বলেছে ভাইয়া?
ছোটভাইয়াঃডাক্তাররা বলেছে মিস্টির ব্রেনের ক্ষতি হয়েছে।যদি আরেকবার এমন হয় তাহলে মিস্টিকে আবার অপারেশন করাতে হবে কিন্তু এতে মিস্টির জীবনের ঝুকি আছে।
বিশাল আর ভাবিনও চুপ করে বসে আছে।
বিশালঃএখন কান্না কর না ভাইয়ারা।এখন আমাদের উচিত মিস্টির খেয়াল রাখা।
ভাবিনঃএকদম ঠিক।ও যেহেতু নিজের খেয়াল নিজে রাখবে না তাই আমাদেরই রাখতে হবে।
বড়ভাইয়াঃঅনেক রাত হয়েছে সবাই ঘুমাতে যাও।
সবাই চলে গেলো।
অন্যদিকে
আমি আমার রুমে শুয়ে আছি।আজকে কেন জানি ঘুম আসছে না।আমি এপাশ ওপাশ করছি কিন্তু ঘুম আসছে না শুধু Jimin এর কথা মনে পরছে।
আমিঃওই বজ্জাতের কথা আমার মনে পরছে কেন?আমি কি Jimin কে মিস করছি।না না এ হতে পারে না।উফ ওই দিন যেই মারাই না মারল।আচ্ছা যদি Jimin মানুষ না হয় তাহলে ওর পরিবারও কি মানুষ না তাহলে কি রুশাও মানুষ না।ওমা এ আমি ক৮ ভাবছি!!আল্লাহ তার মানে কি কথা আন্টিও মানুষ না।আল্লাহ আমি আর ভাবতে পারছি না।আচ্ছা ওরা যদি মানুষ না হয় তাহলে ওরা কি?উফফফ আমি পাগল হয়ে যাবো।
এসব ভাবতে ভাবতেই আমি ঘুমিয়ে গেলাম।
আমি ঘুমিয়ে গেলে বড়ভাইয়া আমার রুমে আসে।
বড়ভাইয়া আমার মাথার পাশে বসে আমার গায়ে চাদর দিয়ে দেয়।তারপর আমার মাথায় হাত ভুলিয়ে দিতে লাগলো।
বড়ভাইয়াঃআমার জন্য তোর এই অবস্থা হয়েছে টুকু।আমি জানি আমি তোদেরকে কিছু না বলে ভুল করছি।আমরা তিনভাইবোন মানুষ হলেও আমাদের মধ্যে ভ্যাম্পায়ারের কিছু শক্তি আছে। কারন আমাদের মা একজন ভ্যাম্পায়ার ছিল আর বাবা একজন মানুষ ছিল।তাই আমরা মানুষ হলেও ভ্যাম্পায়ারের কিছু শক্তি আমাদের মধ্যে আছে যার কারনে আমরা কোন মানুষকে বিয়ে করতে পারবো না।আমি জানি প্রত্যেকরাতে jimin তোর কাছে আসে।আর আমি এও জানি যে Jimin তোকে ওইদিন রাতে মেরেছে।কিন্তু আমি নিরুপায় টুকু।কিন্তু আমি জানি Jimin তোকে আর কস্ট দিবে না আর তুই ও ওকে খুব ভালবাসবি।
এই বলেই ভাইয়া আমার কপালে আদর করে দিল।
সকালে
আমি রেডি হয়ে নিচে নামলাম।দেখি সবাই খাবারের টেবিলে বসে আছে।আমি গিয়ে আমার চেয়ারে বসে পরলাম।
তারপর দুইভাই আমাকে খাইয়ে দিল।তারপর আমি,বিশাল আর ভাবিন ভার্সিটিতে চলে আসলাম
আমরা গিয়ে দেখি রুশা আর মেহেক দাঁড়িয়ে আছে।আমি গিয়ে ওদেরকে জড়িয়ে ধরলাম।
রুশাঃকেমন আছিস?
আমিঃভালো।তুই?
মেহেকঃআমরাও ভালো আছি।বিশাল আর ভাবিন তোমরা কেমন আছ?
বিশালঃআমরাও ভালো আছি।
আমি চারপাশে Jimin কে খুজতে লাগলাম।
রুশা ব্যপারটা খেয়াল করেছে।
রুশাঃতুই কি কাউকে খুজছিস??
আমিঃকই না তো।চল ক্লাস এ যাই।
বিশালঃহুম চল।
তারপর আমরা সবাই ক্লাস এ গেলাম।ক্লাস শেষ করে আমরা বাহিরে আসলাম।
রুশাঃচল ক্যান্টিনে যাই।
আমিঃতোরা যা।আমি,বিশাল আর ভাবিন একটু লাইব্রেরীতে যাবো।
মেহেকঃআচ্ছা।
তারপর আমরা লাইব্রেরীতে যেতে লাগলাম।মাঠ দিয়ে যাওয়ার সময় হঠাৎই একটা মেয়ে আমাদের সামনে এসে পরল।আমরা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি মেয়েটার দিকে।।
মেমেয়েটার জামা হাতের দিক দিয়ে ছেড়া।ওরনা নাই।হাতে নখের দাগ।
দেখলাম কতগুলা ছেলে এসে মেয়েটার পিছনে দাঁড়াল।
আমি ছেলে গুলার দিকে তাকিয়ে আছি।বিশাল আর ভাবিন মনে হচ্ছে যেন ওদেরকে খেয়ে ফেলবে।আমি ওদেরকে ইশারায় শান্ত হতে বললাম।
আমি মেয়েটাকে আমার গলায় জরানো স্কার্ফটা খুলে ওর গায়ে জড়িয়ে দিলাম।
তারপর ছেলে গুলার দিকে এগিয়ে গেলাম।
আমিঃকি হচ্ছে এগুলা????(শান্তভাবে)
ওরা ৬ জনের মত আছে।বিশাল আর জন আসতে লাগলেই আমি ইশারায় না করলাম।ওরা আর এগোল না কারন ওরা জানে আমি একাই একশো।
১ম ছেলেঃবা একটা পাখির সাথে আরেকটা পাখি ফ্রি।এবার তো খেলা জমে যাবে।(অট্টহাসিতে ফেটে পরে)
আমিঃ ও আচ্ছা।সাহস থাকলে আমার আর মেয়েটার গায়ে হাত দিয়ে দেখ।
ছেলেগুলা আমাদের দিকে এগিয়ে এসে গায়ে হাত দিতে গেলেই আমি হাতের কাছে লাঠি দিয়ে ওদের সবার হাতে একসাথে বারি দিলাম।আর বারিটা এত জোরে ছিল যে ছেলেগুলা হাত ধরে নিচে বসে পরল।
আমি ওদের কাছে গিয়ে একহাটু নিচু করে আরেক হাটু সোজা করে বসলাম।তারপর বললাম
আমিঃএটুকুতেই এই অবস্থা।
বলেই যেই ছেলেটা আমার সাথে পরে ছিল তার পিঠে এক বারি দিলাম।বেচারা এবার শুয়ে পরল।বিশাল আর ভাবিন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাসছে।
এবার আমি ওঠে দাড়ালাম।আর আমি দাড়াতেই ওদের থেকে একটা ছেলে আমার দিকে তেড়ে আসতে গেলে আমি তার গাড় ধরে দেয়ালের সাথে দিলাম এক বারি।বেচারারা সবাই ভয় পেয়ে গেল।তারপর আমি আমার কোমরের বেল্ট খুলে ওদেরকে মারতে লাগলাম।
আমার রাগ এতটাই বেড়ে গেল যে নিজেকে শান্ত করার জন্য আরও বেশি করে মারতে লাগলাম।
বিশাল আর ভাবিন আমার কাছে এসে আমাকে ধরল।
আমিঃআজকে আমি তোদের মেরেই ফেলব।তোদের সাহস হল কি করে আমার সামনে কোন মেয়ের দিকে হাত বাড়ানোর।(চিল্লিয়ে রেগে)
বিশাল আর ভাবিন আমার দিকে হয়ে তাকিয়ে আছে।
বিশালঃশান্ত হ জানু।
আমিঃবিশালের কথায় আমার হুশ ফিরে এলো।
বিশালঃএভবে মারিস না বেচারা মারা যাবে।
আমি কিছু বলতে যাব তার আগেই সারা(মেয়েটা) এসে আমাকে জড়িয়ে ধরল।
সারাঃআমাকে বাচানোর জন্য ধন্যবাদ আপু।
আমি কিছু না বলে ওর মাথায় হাত রেখে চলে আসলাম।
আসার সময় ভাবিনকে বলে আসলাম সারাকে বাড়িতে দিয়ে আসতে বললাম।আমি আর বিশাল বাইক নিয়ে বেরিয়ে পরলাম।
আসুন মেয়েটার সম্পর্কে কিছু জেনে নেই
(নাম সারা জাহান জেনি।লম্বা ৫'২।গায়ের রং লাল সুন্দর। দেখতে মাশাল্লাহ।। বয়স ১৯।মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়ে।তার বাবা একটা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করে।)