পিছনে ফিরতেই দেখলাম রাবিশটা মোবাইল বাড়িয়ে দিচ্ছে আমার দিকে আর চোখে ইশারা দিয়ে বলছে,"তোমার ফোন।"
মোবাইলটা হাতে নিয়েই কানে দিলাম।আর কন্ঠটা শুনে খুশিতে চোখে পানি চলে আসলো আর মুখে এক চিলতে হাসিঁ।
আমার আম্মু কথা বলছে,"হ্যালো,y/n কেমন আছিস?"
আমি : জি আম্মু ভালো আছি। তুমি কেমন আছো?
আম্মু : ভালো,নাশতা করছিস?
আমি : হা আম্মু।তুমি করছো?
আম্মু : হা।।শোন আজকে দুপুরে তোর ভাইয়েরা,আর তোর কাজিনরা সবাই যাবে।তো তোর কি কিছু লাগবে যেমন ড্রেস বা কোন জিনিস যদি লাগে আমি তাদের দিয়ে পাঠিয়ে দিতাম আর কি।
আমি : না আম্মু কিছু লাগবে না।
আম্মু : সিউর তো?
আমি : হ্যাঁ।
আম্মু : ঐ চকলেটের বক্স টাও লাগবে না?
আমি : আরে আমি তো ভুলেই গেছিলাম।হ্যাঁ আম্মু হ্যাঁ আমার ঐটা লাগে আর ঐ ডায়রীটাও যেটা আমার ফ্রেন্ড lisa দিয়েছিলো সেটাও দিও।
আম্মু : আচ্ছা ঠিকাছে। তাহলে রাখি।আর ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া করিস।নয়তো বেশি শুকিয়ে গেলে সুন্দর লাগবে না,বুঝছিস।
আমি : হা আম্মু।ঠিকাছে আমি সব ঠিক মতো করবো। আচ্ছা আম্মু রাখো বাই।
আম্মু : হুম।
ফোনটা রেখে দিলো।আর আমি মোবাইল হাতে নিয়ে ভাবছি আম্মুটা না কি ভাবে,আমিকি এখোনো ছোট যে খাওয়া দাওয়া ঠিক মতো করার জন্যে মিথ্যে বলছে।ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া না করলে নাকি সুন্দর লাগবে না হা হা হা।
সব বুঝি।
আম্মু বিয়ের আগেও বলতো,"যে শাক সবজি বেশি খেলে নাকি সুন্দর হয়,চুল লম্বা হয় আর আমি তা শুনে গড়গড় করে সবজি গিলতাম আর মুখটাকে বাংলার পাচেঁর মতো করে আম্মুকে বলতাম এখনতো আমি সুন্দর হয়ে যাবো তাইনা আম্মু?"
আম্মু বলতো ,"না।"
আমি : কেনো আম্মু?
আম্মু : এটুকু খেলে হবেনা আরো বেশি বেশি সবসময়, প্রতিদিন খেতে হবে।
আমি : যেখানে আসি মোটেও সবজি খায়না।শুধু মাছ,,,মাংস ডিম ভাজা ছাড়াই ভাত খায়না সেই আমিই নাকি সবজি খাবো।ইয়াক।
আমিতো আব্বুর সাথেই ডিনারে বা লান্চে খেতে টেবিলে বসতাম না। আব্বুর আগে খেতাম খুব ক্ষুধা লাগছে এভাবে মিথ্যা বলে আর নাহয় পরে খেতাম।
কেননা,এই আমার বাবাটাও আমায় তার সামনে সব শাক সবজি জোর করে খাওয়াইতো। কিন্তু আমার খুব অসহ্য লাগতো।
আর আজকে কিনা আম্মু আবার সেই টেকনিকটা কাজে লাগালো।
হঠাৎ পিছনে ফিরে দেখি রাবিশটা আবার এসে হাত বাড়িয়ে দিলো!
আমিতো পুরোপুরি অবাক,"কারণ তখনো আমি বেলকুনিতে ছিলাম আর এসব ভাবছিলাম।তার এমন আচরণে আমি হতবাক?"
আমার তার হাতে হাত দিতে খুব লজ্জা লাগছে তাই আমি লজ্জায় নীচে গোলাপ চারাটার দিকে থাকিয়ে আছি।
আর রাবিশটা হঠাৎ আমার হাত থেকে মোবাইলটা চো মেরে নিয়ে আমার দিকে চেয়ে আছে আর আমিও আরো বেশি অবাক হয়ে তার দিকে চেয়ে আছি। দেখি তার চোখ দুটো আবার রাগান্বিত ভাবে আমাকে দেখছে।আমি আবারো মনে মনে গালি দিচ্ছি।
হারামজাদা,,,,,শয়তান,,,,বদমাইস,,তোর চোখ দুইটা আমি আঙ্গুল দিয়া গেলে দিবো।কুত্তা ঐদিকে থাকা তোর এত বড় সাহস তুই y/n এর দিকে এমনভাবে তাকাস। শয়তান কোথাকার।কিছুক্ষণ এভাবে থাকিয়ে আবার চলে গেলো।
সেই ভেবেছিলো আম্মুর সাথে কথা বলার পর আমি নিজে গিয়ে তাকে তার মোবাইলটা দিয়ে আসবো।
হুহ,আমার বয়েই গেছে,
আমি তার চাকরানি নাকি।
আর আমি যে মনে মনে গালি দেয় সেটা হলো আমার অভ্যেস,আমিনা ছোট থেকে যে স্যার আমাকে মারতো আমি মনে মনে তাদের গালি দিয়ে তাদের চৌদ্দগোস্টিকে উদ্দার করতাম।
যাক এসব বাদ।এখনতো ঐ খরুচ রাবিশ টাকে কিছু একটা করতে হবে। এটারে সবসময় জালাইতে হবে।
তারপর এইসব ভেবে বেলকুনি থেকে রুমে এসে বসে রইলাম।খরুচটা রুমে নাই।রুমটা খালি মনে হয় বাইরে কোথাও গেছে।আহা এখন ফেসবুকে ডু মেরে আসি,মোবাইলটা নিয়ে ফেসবুকে লগ ইন করলাম।
নটিফেশনস দেখছি,মেসেজ চেক করছি তেমন একটা মেসেজ নেই কারণ সেটা আমি নিজেই। একে তো প্রোফাইল পিক একটা ছেলের যাকে আমি চিনিইনা। এমন দিছি ছেলেরা যাতে বুঝে এটা ছেলের আইডি কোনো মেয়ের না তাই।
হুম আমার অনেক বুদ্ধি।
আচ্ছা ঐ যে রাবিশ খরুচটার নামটা দিয়ে একবার সার্চ মেরে দেখি তো, ওমামামামাামামম,আমার চোখ কপালে,
সার্চ মারতেই সবার প্রথমে চলে এলো আইডিটা।
নাম Kim Taehyung আর খুব সুন্দর চোখে সানগ্লাস লাগানো মন কেড়ে নেবার মতো একটা প্রোফাইল পিক।যা দেখে রিতিমতো ক্রাশ খেলাম।
আমিই ক্রাশ খেয়েছি মনে হয় আরো কত মেয়ে ক্রাশ খেয়েছে বা খাচ্ছে।আর মনে মনে একটু খুশি হলাম এজন্য যে,
আমার বরটা তো খুব সুন্দর।দেখার মত কিন্তু দেখে কি হবে যেমন চেহারা তেমনতো তার স্বভাব না।চেহারা দেখে মনে হয় তো খুব ইন্নোসেন্ট।আসলেতো একটা বজ্জাত,রাবিশ,খরুচ।।হুহ আবার সানগ্লাস দিয়া পিক উঠায়ে ফেসবুকে দিছে।
হুহ,কত্ত ঢং ! ঢং দেখে আর বাঁচিনা।
এমন সময় আসলো আমার ননদিনী eunjoon।
Eunjoon:ভাবি কি করছো?
আমি : আমি,কই কিছু নাতো। এমন বলে তারাতারি মোবাইল তেকে সব ব্যাক অফশন দিয়ে মোবাইলটা রেখে দিলাম।
Eunjoon : আচ্ছা ভাবি তোমাকে বলতে আসলাম আর কিছু দিতেও আসলাম নাও।
এই বলে eunjoon আমার দিকে কিছু একটার প্যাকেট এগিয়ে দিলো আর বললো,
Eunjoon : ভাবি আম্মু বলেছে এই শাড়িটা পরে,গয়না টয়না সব পরে তৈরি থাকতে।
আমি : কেনো?
Eunjoon : ওমা কেনো আবার, তোমার বাপের বাড়ি থেকে মানুষ আসবে না তাই আর কি।
আমি : ওহ আচ্ছা।
Eunjoon : তবে আমি যাই।অনেক কাজ আছে এমন বলে একটা চোখ টিপ মেরে চলে গেলো।
আর আমি ভাবতে লাগলাম, আহা আগে ছিলো একটা বাড়ি। আর এখন দুইটা বাড়ি।চোখ দিয়ে দুফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো।
তারপর দরজা লক করে আবার ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে শাড়ি গয়না সব পরে রেড়ি হলাম।খুব ইজি ফিল হচ্ছে,কারণ রাবিশ খরুচটা বাসায় নাই সে নাকি তার বন্ধুর বাসায় গেছে।
Eunjoon এর থেকে শুনছি।।eunjoon নিজেই বলছে আমি কিছুই জিঙ্গেস করিনি।।
এসবের মধ্যে দিয়ে দুপুর প্রায় দুইটার দিকে আমার ভাই আর কাজিনরা আসলো আর আমাকে ডেকে নীচে নেওয়া হলো।
আমি তো তাদের দেখে খুশিতে লাফানোর মতো অবস্হা আর জোরে জোরে খুশিতে কথা বলছি।আর আমার জোরে কথা বলাতে আমার এক কাজিন মানে আমার ফুফাতো ভাইয়ার বউ আমার ভাবি বলছে,
" আরে সানিয়া আস্তে আস্তে কথা বল এটা তোর শুশুর বাড়ি আর তুই নতুন বৌ না তাই এভাবে বিহেব করা ঠিক হবেনা।"
হঠাৎ এই ফাকে আমার রাবিশ খরুচটার সাথে চোখাচোখি হলো।তাকে ফোন করে আনিয়েছে আমার শাশুরি মা।আমার ভাইরা এসেছে না তাই আর কি।
ভাবিরা খুব দুষ্টুমি করছে আমার সাথে Taehyung কে নিয়ে।কিন্তু তাতে আমার কোনো মাথা ব্যাথা নেই।আমি হঠাৎ ভাবিকে বললাম,
আমি : ভাবি আমি তোমাদের সাথে খেতে বসবো নাইলে ওদের সাথে বসলে আমি ভালকরে খেতে পারিনা।
ভাবি : কেনো খেতে পারিস না।কেউ কি মানা করছে খেতে নাকি রাতে অসুবিধা হয় তাই, হুহহহহহহহ?
আমি : ছিঃ ভাবি কি বলছো এসব।
আমাকে না আসলে, আসলে Taehyung নিষেধ করছে।বলছে কম খাইতে নাহলে নাকি আমি মোটি হয়ে যাবো তাই।
ভাবি : কি?সত্যি
আমি : হুম।
আর কথায় কথায় অন্য কথা বলে ভাবিকে সেটা ভুলিয়ে দিলাম।
ভাবি : y/n জানিস jimin আসছে ।